অপ্রেমিক
© চি ন্ম য় বা উ রী – www.shilpajagat.com
“manasi roy is in a relationship” টুং করে এই notification ঢুকলো অয়নের ফোনে, আর তা দেখেই মুখটা ভার হয়ে গেল অয়নের!
তা এই হচ্ছে অয়ন, গল্পের নায়ক, না সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে নায়কোচিত কিছুই নেই এনার মধ্যে, না আছে looks, না বাপের টাকা, আর না বুকের পাটা, একেবারে ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি! নিজেরটুকু বলতে ছিল ঐ মেয়েটি মানে প্রেমিকা ‘মানসী’, এখন তো তাকেও আর আপন বলা যাবে না। প্রায় চার বছরের ভালোবাসাকে লাথি মেরে কিভাবে অন্য একটা সম্পর্কে জড়ালো, এটা ভেবে অয়ন কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। যদিও তারা শেষের ছ’মাস ভালোভাবে কথা বলেনি, ঝগড়া ঝামেলা করেই কেটেছে, এটা যে হবে সেটা অয়ন আঁচ করেছিল, তবে এত জলদি হবে এটা আশা করেনি!
না, formalized break-up কোনদিনই হয় নি তাদের মধ্যে, অয়নের দিক দিয়ে তো নয়! ব্যাস কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, sms গুলোর reply আসা বন্ধ হয়ে গেছে আর whatsapp এর message গুলোর নীচে দুটো নীল দাগ দেখার অভ্যেস হয়ে গেছে! গা পিত্তি জ্বলে উঠে অয়নের , কিন্তু কিছু করার নেই, সেই অধিকারবোধ টা হারিয়ে ফেলেছে!
না, ব্লকের রাস্তায় হাঁটেনি ‘মানসী’, রোজ দুবেলা ওর প্রোফাইল স্টক করতে পারছে, whatsapp এর last seen দেখতে পাচ্ছে, এটাই যা পরম সৌভাগ্যের! আগে এতটা insecurity তে ভুগতো না অয়ন, যাকে বলে অগাধ বিশ্বাস ছিল মেয়েটার উপর, বহু তর্কে মেয়েটাকে স্বেচ্ছায় জিতিয়ে দিয়েছে, সেরকমই এক তর্কে বলছিল “জওহরলাল নেহেরুর পর মোদিজি হচ্ছে ভারতের সেরা প্রধানমন্ত্রী” নিজের হাসিটাকে আটকে দিয়ে তার কথাই সায় দিয়েছিল অয়ন, এরম কত আষাঢ়ে গপ্পোর সাক্ষি থেকেছে, শুধুমাত্র মানসীর মুখে হাসি ফোটাবে বলে! তাল টা কাটলো সেদিন যেদিন না চাইতেও মানসীর ফোনে ঐ একটা ছেলের সাথে নোংরা chat দেখে ফেলল, chat টা অবধি ঠিক ছিল কিন্তু সেখানের শরীর প্রদর্শনী আর মানসীর flirt করার বহর দেখে, মানসীর উপর একরাশ ঘেন্না ছাড়া কিছুই আসেনি। হুবহু মনে হয়েছিল ভিকি কৌশলের “বড়া পছতাওগে” গানটার দৃশ্য!
সেইদিন আর আজকের দিন, এই মাত্র তিনমাসে মানসী যে এতটা দুরে চলে যাবে অয়ন ভাবে নি, তাকে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টাই করেছিল, ধোপে টেকেনি সেইসব চেষ্টা! “মেয়েদের অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি” আজকের এই status update দেখে তার তাই মনে হচ্ছে! না, ফেসবুকে আর থাকবে না অয়ন ভেবে নিয়েছে, যাক মার্ক জাকারবার্গের একটা গ্রাহক কম হলো!
– কিরে এখনো রেডি হস নি? যাবি না নাকি?
– নারে, শরীরটা ভালো লাগছে না! তুই যা!
– মানে? সকালেই তো বললি যে টিকিট কাটা, দেখতে যাবো! হঠাৎ কি হলো?
অনায়কোচিত চেহেরা আর গুণাবলি নিয়ে অয়ন যদি গল্পের নায়ক হতে পারে, তবে ইনি নিঃসন্দেহে গল্পের সহ-অভিনেতা, ইনি সন্দীপ, অয়নের বেষ্ট ফ্রেন্ড কাম ভাই কাম “লাখত-এ-জিগর”!! সেই ক্লাস ওয়ান থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোন কাজ নেই যেটা ওরা একসাথে করেনি, সেই কাজের লিস্ট এখানে দিলে হয়ত শেষ হবে না! নিজের ভাইও এতটা করবে না যতটা “স্যান্ডি” করেছে তার জন্যে, প্রকৃত অর্থে brother from another mother, আজকালকার যুগে এরম একজন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
– দেখি তোর ফোনটা, source of depression টা ঐ ফোন থেকেই মনে হচ্ছে(অয়নের হাত থেকে ফোনটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে), ওহ আচ্ছা! মানসীর সম্পর্কে জড়ানো দেখে তুই এরম দেবদাস হয়ে গেলি! আরে এদের কাছে এসব সম্পর্ক ছাড়া, জোড়া কোন ব্যাপারই নয়, এই জন্যে হয়ত তোর সাথে break-up করেছে, দেখ! দুদিন পর হয়তো আবার . . . . . . .
– শোন ভালো কথা বলতে জানিস না তো প্লিজ বলিস না! বেকার মেয়েটাকে খারাপ বলে কি হবে! দুজনেরই তো দোষ ছিল!
– কপাল, বুঝলি! পুরোটাই কপাল, তোর মতো একজন ভালো মানুষকে হারালো মানসী!
– এটা তুই আমার বন্ধু বলে বলছিস! ওসব ছাড়, সিনেমা দেখতে যাবি বলছিলিস, চল যাওয়া যাক!
– দেবদাস এতক্ষনে relapse করেছে বুঝি! হ্যাঁ, চল কতদিন ভালো সিনেমা দেখিনি, ৪ টে টিকিট কাটতে দম বেরিয়ে গেল!
– অত টিকিটে কি হবে?
– তুই ভুলে যাচ্ছিস break-up তোর হয়েছে, আমার না! সুনন্দা আসবে ও তার একটা বান্ধবী! আমরা দুই ওরা দুই! দুইএ দুইএ চারই তো হয় বোকাছেলে!
বলে রাখি সুনন্দা হচ্ছে স্যান্ডির গার্লফ্রেন্ড, বড্ড ভালো মেয়ে কখনও এদের দুজনের মাঝে আসেনি, তবে এই গল্পের তার অবদান নামমাত্র, যাকে বলে ঐ guest appearance!
– এক মিনিট, ওর বান্ধবীকে আনার পেছনে তোর কোনো মতলব নেই তো!
– শোন ভালোই হয়েছে, মানসী গেছে, এর সাথে কথা বলতে পারিস!
– না, আমি পারবো না, break-up মানেই যে “খুল্লা ষাঢ়” এমন টা নয় কিন্তু!
– বেশি সতীত্ব মারিয়ো না, বুঝলে! প্রেমটাও এই সন্দীপের জন্য করতে পেরেছিলে! শালা! নাহলে তোমার মুরোদ কত টুকু আমার জানা আছে!
– সে আমার নেই মানলাম, কিন্তু আবার প্রেমে পড়তে বলছিস, আবার সেই দুঃখের গাজন গাইতে বলছিস!
– ধুর বোকা! তুই কি শাহরুখ খান! যে কিকিকিকিরন করবি আর মেয়েরা flat হয়ে যাবে! কথাটা তো বল! মানসীকে দেখ আর শেখ! কত্ত advanced!
– জোর করিস না ভাই, “মেয়ের কষ্টের মলম আরেকটি মেয়ে” এই theory তে আমি বিশ্বাস করি না!
– অনেক হলো, এইসব কথা বিগত মাসছয়েক থেকে শুনছি! আগেই বলেছিলাম তোকে move on করতে, কিন্তু তুই officially divorce এর অপেক্ষা করছিলি, আজ তা পেয়ে গেছিস! চল চল রেডি হো!
অগত্যা স্যান্ডির জোরাজুরিতে সিনেমার উদ্দেশ্য শুরু হলো তাদের “মহাপ্রস্থান”! সিনেমা শুরু হয়েছে, হল পুরো হাউসফুল! এদিকে স্যান্ডি আর অয়ন হলে বসে, অথচ এখনও দেখা নেই সুনন্দা আর তার বান্ধবীর, এবার তো হলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে! এদিকে অজস্র মেসেজ, ফোনেরও কোনো উত্তর নেই! তাহলে কি ওরা আসছে না! এইসব চিন্তা, উৎকন্ঠা কে এক ঝটকায় ঠেলে সরিয়ে হাজির দুই রমনী, সুনন্দা ও তার বান্ধবী!
– এসো, এতো দেরি হলো তোমাদের! যাক গে, আমাদের সীট টা ঐদিকে আছে! আর তোমার বান্ধবী এখানে আমার বন্ধুটার কাছে বসুক!
ঠিকই করেছে, যাতে তার প্রেমে কোনো বিঘ্ন না ঘটে তাই দুই কোনে সীট নিয়েছে সন্দীপটা, আগের বার এতই অস্বস্তি হচ্ছিল অয়নের, দুজনের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি বনে যাচ্ছিল! তবে এবারও কি কম অস্বস্তি হবে, অচেনা অজানা একটা মেয়ের সাথে বসে সিনেমাটা দেখতে হবে!!
বলার অপেক্ষা রাখে না ইনি আমাদের গল্পের নায়িকা! নায়িকার চরিত্রে একেবারে মানানসই, সুন্দরী বললে ভুল হবে, পুরো ডাকসাইটে সুন্দরী! না নামটা এখনই বলা যাবে না, নামটা ক্রমশ প্রকাশ্য। তো প্রাচীনকাল থেকেই এটা চলে আসছে, সুন্দরীদের সাথে থাকলে কথা ঠিক বেরোই না, অয়নের ক্ষেত্রে এটা আর একটু advanced level এ চলে গেছে, অয়ন পুরো বাকরুদ্ধ, সোজা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলছে! এমনিতেই অয়ন একটু introvert গোছের, ঠিক frequency না মিললে, কথা বলতে পারে না, মনে আছে তার সেই মানসীকে প্রোপোজ করতেও মাসখানেক লেগেছিল! তাও সন্দীপ ছিল বলে, বাইকে করে নিয়ে গেছিল মানসীর টিউশন সেন্টার! সেখানে সন্দীপ মানসীর পথ আটকে অয়নকে বলতে সাহস জুগিয়েছিল, নাহলে অয়ন সেনের দ্বারা মেয়ে পটানো হত না! সেই স্যান্ডিকে আজকে গাল দিতে বাধ্য হচ্ছে অয়ন তার কারন অয়নের পাশে বসা এই সুন্দরী রমনীটি, কোনোরকম ভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে স্ক্রিনের আলোই রমনীকে যেরম দেখল তাতে তার মনে হল ছোটবেলায় রামায়ণ, মহাভারতে দেবরাজ ইন্দ্রের যোগসাজশে, ঋষি মুনিদের ধ্যান ভাঙাতে আসা ঊবর্শী, রম্ভা, মেনকাদের কথা! এতই সুন্দরী যে অয়নের প্রিয় নায়িকা ইলিয়ানা ডিক্রুজকে বলে বলে দশ গোল দেবে! এত সুন্দরী একটা যে সুনন্দার বান্ধবী আছে সেটা জানত না, এদিকে অয়ন পড়েছে বেজাই অস্বস্তিতে, নামেই এগুলো আরামকেদারা, আরামের লেশ টুকু খুজে পাচ্ছে না! তার সাথে giant স্ক্রিনে অন্তরঙ্গ দৃশ্য চলায় পরিস্থিতি worse to the power infinity, এখনকার সিনেমাতে গল্প থাক না থাক, চুমু থেকে ঘুমুর দৃশ্য থাকবেই!
ধুর, এভাবে থাকা যায় না, কিন্তু এভাবে হুট করে চলে যাওয়া টা ঠিক হবে না, সন্দীপ কি ভাববে? শরীর খারাপের বাহানা করে চলে যাওয়া যায় কিন্তু হারামি সন্দীপটা বুঝে যাবে, হাঁড়ে হাঁড়ে চেনে অয়নকে! তার চেয়ে বরং এখানেই বসে কাটিয়ে দেওয়া যাক, এক-দেড় ঘণ্টার ব্যাপার, বেশি বড় হয় না আজকালকার সিনেমা গুলো, ঠিক শেষ হয়ে যাবে! আবার মাঝে মাঝে অয়নের মনে হচ্ছে যে সিনেমার terrorist attack টা এই হলেই হয়ে যাক বা তীব্র কোন ভূমিকম্প আছড়ে পড়ুক এখানে, মানে “জান জাইয়ে পর জুবান না খোল পাইয়ে”!! এতসব অলীক কল্পনা চলছিল অয়নের মাথায় ঠিক সেই মুর্হুতে সব নিরবতাকে চিরে আওয়াজ এলো!
– will you please keep my phone? i want to go to the loo!
ওনার কাছ থেকে যে আবেদন আসবে তাও আবার এরম আবেদন তা স্বপ্নেও ভাবেনি অয়ন!
– আসলে আমার ব্যাগটা সুনন্দার কাছে, আর এ মুর্হুতে তাকে disturb করাটা ঠিক হবে না, so please understand!
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথা গুলো শুনলো অয়ন।
– তবে হ্যাঁ, ফোনটা দিয়ে যাচ্ছি বলে নিজেকে হিরো ভাবার কোন দরকার নেই! হিরোদের সিনেমাতেই মানায়! they don’t exist in reality!
না আর সহ্য হলো না অয়নের!
– এই যে ম্যাডাম, এক ঘন্টা ধরে একটা মেয়ের সাথে কথা বলার ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছি, আর আপনার মনে হয় এই ফোনটা নিয়ে পালিয়ে যাবো! যান অন্য কাওকে রাখতে দিন!
আসলে আত্মসম্মানে লাগলে বোবারাও চিৎকার করে ওঠে! এই এক ঘন্টার জমানো যত অস্বস্তি এক নিমেষে বের করে দিল অয়ন, সুন্দরীদের দেমাগ হয় শুনেছিল আজ তা প্রমাণিত!
– আচ্ছা, সরি সরি, প্লিজ ফোনটা রাখুন!
এটা তো আশা করেছিল না অয়ন, ভেবেছিল যুদ্ধটা আরেকটু চালাবে মেয়েটা এবং এই যুদ্ধের উপর ভর করেই এই অস্বস্তিকর হল থেকে বেরিয়ে যাবে, তবে এত সহজে মেয়েটা যে অস্ত্র নামিয়ে sorry বলে আত্মসমর্পণ করে দেবে এটা মোটেও ভাবে নি! অতঃপর ফোনের জিম্মা রেখে সুন্দরী চলে গেল বাথরুম, আর এদিকে অয়নও পাহারাদার দের মতো “হোসিয়ার, খবরদার” করে মহামুল্যবান ফোনটার পাহারা দিতে লাগলো!
সেই যে গেছে আসার নাম নেই, তা মিনিট বিশেক তো হলো এদিকে সিনেমাতে বাচ্চাটা বড় হয়ে নিজে বাচ্চার বাবা হয়ে গেল, অথচ এনার আসার নাম নেই, আয়না পেয়ে touch up শুরু করে দিয়েছে কি না কে জানে?
টুং করে একটা শব্দ এলো, এটা নির্ঘাত ফোনে মেসেজ ঢোকার শব্দ, অত সৌভাগ্য নেই অয়নের, যে অয়নকে কেউ মেসজ করবে, যে করার সে কবেই ছেড়ে চলে গেছে, সুন্দরীর ফোনটা জ্বলে উঠেছে, কোন এক ভাস্কর মেসেজ করেছে তার সাথে ফোনের wallpaper টার দিকে নজর গেল অয়নের, শাড়ি পরে pout করা একটা ছবি আছে wallpaper এ, কি সুন্দর! ভগবান নিশ্চয় অনেক যত্ন করে বানিয়েছেন একে, যেকোনো ছেলে এর প্রেমে পড়ে যাবে, অয়নও যে একটু crush খায় নি এমন নয়, তবে হ্যাঁ সযত্নে লুকিয়ে গেছে, অভিনয়টা অয়ন বেশ ভালোই পারে সেদিন যেদিন মানসী আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নিলো, বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল অয়নের কিন্তু শুধুমাত্র মানসীর মুখের দিকে তাকিয়ে, সব কষ্ট গিলে নিয়েছিল!
– thank you so much! I hope কেউ call করেনি?
– না, call তো আসেনি, হ্যাঁ কোনো এক ভাস্কর মেসেজ করেছে, আমি ওর নামটা দেখলাম আর. . . .
– আর কি?
– আপনার wallpaper টা, ওরম শুয়োরের মতো মুখ করে আছেন কেন?
– excuse me, কি বললেন? শুয়োরের মতো! ওটাকে pout বলে! অশিক্ষিত!
– i am very sorry, আসলে আমি জানিনা, এক দুজনকে দেখেছি ওরম করতে কিন্তু বিশ্বাস করুন জিজ্ঞেস করার সাহস হয় নি!
– কোন জমানায় বাস করেন আপনি?
– sorry বললাম তো! না জেনে বলে ফেলেছি, তা এত সুন্দরী আপনি ওরম শুয়োরের মতো মুখটা করার দরকারই বা কি?
– বুঝতে পারছিনা তারিফ করছেন নাকি অপমান!
– এই দুটোর মধ্যে কোনোটাই নয়! সত্যি বলছি!
– তাহলে thank you once again! আপনার নাম অয়ন তো!
– হ্যাঁ, আর আপনার?
– রোশনি, রোশনি মুখার্জি!
– অবাঙালি নাম কেন? বাংলা তো বেশ ভালোই বলছেন!
– নামের আবার বাঙালি অবাঙালি কি! নাম ইজ নাম, হিন্দিতে যেটা ‘রোশনি’ বাংলাই সেটা ‘রশ্মি’! মানে দুটোরই কিন্তু আলো!
– ঠিক আছে, নাম নিয়ে আর জ্ঞান দিতে হবে না! চেক করুন আপনার বয়ফ্রেন্ড কি বলছিল, ঐ ভাস্কর!
– for your kind information, ভাস্কর আমার বয়ফ্রেন্ড নয়! ভালো বন্ধু!
– ওহ আচ্ছা! তাই বলুন, বয়ফ্রেন্ড হলে বাথরুম থেকে আসতে না আসতেই reply দিয়ে দিতেন! এটা দোস্ত বলে reply টা চোস্ত হলো না!
– হুম, সিনেমাটা শেষও হচ্ছে না, বিরক্তি লাগছে এবার!
– সে তো লাগবেই বাথরুমেই তো আধঘন্টা কাটিয়ে এলেন!
– শুনো আপনি না বরং তুমি টাই বলো, বুঝলে! দেখো সন্দীপ দা কিরম enjoy করছে এরম একটা সিনেমা!
– সাথে গার্লফ্রেন্ড থাকলে সাদা কালো সিনেমাও রঙিন লাগে!
– তো, তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই?
এই রে দিলো তো দগদগে ঘা এর উপর হাত টা রেখে! কি বলবে অয়ন! ছিল একজন যার মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে যেত সারা দুনিয়া, আজ সে অন্য কারোর!
– না নেই, break-up হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে!
– i am sorry, তা patch-up বৃথা চেষ্টা হয় নি?
– হয়েছে কিন্তু টেকেনি! আর patch-up হলে কি এখানে turn up করতাম!
– কেন? relationship এ থাকলে মানুষ সিনেমা দেখতে যায় না বুঝি!
– না যাই তো, কিন্তু এভাবে কোনো অচেনা অজানা সুন্দরীর ‘ফোন’ পাহারা দেয় না!
– বাবাহ! এত তারিফ করছো যে, মতলবটা কি?
– না না কিছু মতলব নেই! তা কটা প্রেমিক আছে পাইপলাইনে!
– তোমাকে নিয়ে নাকি তোমাকে ছাড়া?
– মানে! আমি আবার কখন. . . . .
– হা হা হা, মজা করছিলাম! আপাতত একটাই, সিদ্ধার্থ, সফটওয়্যারে আছে!
– তো সাথে এলো না?
– কাজে ব্যস্ত! দিন রাত শুধু কাজ কাজ আর কাজ!
– এরম গার্লফ্রেন্ড যার, তার কাজে মন বসে কিভাবে?
– ওর জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে?
– কে আমি? না স্বপ্ন দেখা ভালো কিন্তু একটা limit এ! you are far far away from my league!
– আচ্ছা, তাই নাকি?
– নিজেকে একবার আয়নাতে দেখো, নিজের কদর টা বুঝতে পারবে!
– এসব কথা বড্ড cliche, সম্পর্কের শুরুতে বেশ ভালো শোনায়, তারপর কেমন যেন ফিকে হয়ে যায়!
– চিনি খেলে তো ফিকে হবেই, গুড় খাও তবে তো মুখে লেগে থাকবে!
– flirt হচ্ছে তাহলে, এতক্ষন তো কথাই বেরোচ্ছিল না, হঠাৎ এরম transformation!
– না, এই জিনিসটা হয় না আমার দ্বারা, flirt মানে তো গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলা, পারি না আমি! মুখ থেকে সত্যি বেরিয়ে যায়! আর তার সাথেই এত কথা বেরোই যার সাথে আমার frequency টা match হয়!
– ভালো লাগলো বেশ কথাটা! তাহলে tinder এর ভাষায় it’s a match নাকি?
– ধুর, অত সত জানি না আমি, facebook টুকু আছে ওখানে request পাঠাতে পারো।
– না, এইসব লোকেদের ফেসবুকে নয়, বুকে আগলে রাখতে হয়!
– বুকে?
– হ্যাঁ, বুকে! ফোনবুকে, নাম্বারটা দাও!
– এই যে বললে, বয়ফ্রেন্ড আছে, ধোকা দিচ্ছো তো তাহলে! আমি দুজনের মধ্যে আমি তৃতীয় ব্যক্তি হতে চাই না!
– are you sure! নাম্বারটা দেবে না বলছো!
– দেখো, একদিন আমি যা feel করেছি আমি চায় না অন্য কেউ সেটা feel করুক, কি পরিমান কষ্ট সেটাতে আমি জানি! তাই আমাকে এতটা special ভাবার জন্য thanks but নাম্বারটার জন্য no thanks!
– এই প্রথম কোন ছেলেকে দেখলাম একটা মেয়ের approach টাকে সম্মানপূর্বক সরিয়ে দিচ্ছে! কোন ধাতু দিয়ে তৈরি তুমি?
– ঐ যে আমি প্রেমিকদের মতো গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারি না, আরো অনেক কিছুই পারিনা! কিন্তু মিথ্যে বলে যদি অসাধারণ প্রেমিক হওয়া যাই তবে আমি অপ্রেমিকই ঠিক আছি!
– আচ্ছা, তবে যে একটা মিথ্যা আমিও বললাম! না, আমার কোন প্রেমিক নেই! হবে আমার প্রেমিক থুড়ি ‘অপ্রেমিক’!
কি মনে হচ্ছে লাস্ট ডিফেন্স কাটিয়ে সুন্দর একটা ভলিতে গোলটা তাহলে করেই ফেলল অয়ন! হ্যাঁ মানসী নামক অন্ধকারকে রোশনি ভবিষ্যতে আলোকিত করবে এমনটা আশা করাই যায়!
তাহলে নায়ক নায়িকা, সহ-অভিনেতা, ক্যামিও, একটা guest appearance আর সবশেষে একটা happy ending নিয়ে গল্পটা পুরো জমজমাট! এবারেও কি বলবেন “পিকচার অভি বাকি হে মেরে দোস্ত”!!
লেখকের অন্য গল্প – কফি প্রেম ও ভালোবাসা
Discussion about this post