বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
শিল্পজগৎ
  • কবিতা
  • গল্প
    • অনু গল্প
    • ছোট গল্প
  • শিশু-কিশোর
    • অনু ছড়া
    • ছড়া
    • লিমেরিক
  • সাহিত্য সমালোচনা
  • প্রবন্ধ
  • চিন্তন
  • আর্ট গ্যালারি
  • পছন্দের লেখক
  • আপনার কলম
No Result
View All Result
শিল্পজগৎ
No Result
View All Result

বেলতলা

সিদ্ধার্থ পাল by সিদ্ধার্থ পাল
জানুয়ারি ১০, ২০২১
in ছোট গল্প
0 0
0
বেলতলা
0
SHARES
7
VIEWS
Share on Facebook
()

বেলতলা || সিদ্ধার্থ পাল

“ব্রুক্‌স, ইয়ে, মানে তোমার একটু সময় হবে?”

কানের লতি চুলকাতে-চুলকাতে আমার ম্যানেজার ব্রুক্‌স নিকলসনের কিউবের সামনে দাঁড়ালাম। সাড়ে ছয় ফুটিয়া দৈত্যাকার ব্রুক্‌স তখন ওর নিপীড়িত চেয়ারে গা ছড়িয়ে ফোনে গিন্নির সাথে প্রেমালাপ করছে। এক্কেবারে টাটকা তিন নম্বর বিয়ে। হানিমুনের হানি এখনও চোখের পাতা ছেড়ে যায়নি। দিনরাত তাই কোম্পানির পয়সায় হাহা হিহি চলছে। অতি গোপন ফিসফাস আমাদের কানে এলেও তার কিছু যায় আসে না। অত উচ্চতা থেকে বাকি মানুষদের দেখতেই পায় না হয়তো। ওকেও দোষ দেওয়া যায় না। সিন্ধুদেশের এতগুলো চাকর-বাকর চব্বিশ ঘণ্টা আসেপাশে তৈলাক্ত বাঁশে আরও তেল ঢালার প্রতিযোগিতায় মেতে রয়েছে। তাদেরকে মানুষের চেয়ে বাঁদর মনে করাই স্বাভাবিক। আর বাঁদরকে রামায়ণের পরে কেইবা তেমন পাত্তা দিয়েছে? যাইহোক, ব্রুক্‌স সাহেব আমার উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে নৈশভোজ এবং ততঃপরবর্তী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ডাবল মিনিং আলাপ আলোচনা চালিয়ে গেলেন রিসিভারের অপর প্রান্তে থাকা সুন্দরীর সঙ্গে। হ্যাঁ, সুন্দরীই তো মনে হচ্ছে। ব্রুক্‌সের টেবিলে জাপটা-জাপটি ভঙ্গিমায় থাকা ছবি যদি আপডেটেড হয় তাহলে ওই মহিলাই ওর তৃতীয় পক্ষ।

“ব্রুক্‌স, একটা জরুরী ব্যাপার…”

গরিলার সমান হাতের পাঞ্জা তুলে আমায় চুপ করতে বলল সে। কুঞ্চিত ভুরূতে প্রচ্ছন্ন বিতৃষ্ণা, আমার প্রতি। ট্রু লাভে অকারণ বিঘ্ন কারই বা পোষায়। নতুন বউয়ের সাথে দীর্ঘ দু’ঘণ্টা দেখা না হওয়ার বিরহে পুরুষমানুষের কিঞ্চিৎ শোকাতুর হওয়া বিরল ঘটনা নয়। অতএব আমায় আরও অপেক্ষা করতে হবে। নিজের কিউবে ফিরে যাবো তারও সাহস নেই। আমার কচি মনে কু ডাকছে। ইচ্ছে করছে, এক্ষুনি চিৎকার করে সকলকে বিষয়টা জানাই। কিন্তু গলা শুকিয়ে কাঠ। অগত্যা ওইখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ইতিউতি চাইলাম।

উপল এই সময়ে রোজ বাইরে ম্যাপল গাছের নিচে আধঘণ্টার জন্যে সিগারেট খেতে যায় ওর ম্যানেজারের সাথে। গোটা দিনে ছ’বার এমন আউটিং হয় ওদের। কিছু লোক কপাল করে আসে মাইরি। কি এক ধ্যাদ্ধেরে প্রোজেক্টের প্রোডাকশন সাপোর্টে অনসাইটে এসেছে ব্যাটা। মাস পয়লায় একটা ফাইল চালাতে হয়, ব্যস। বাকি দিনগুলোতে খালি ফুক্‌ফুক্‌ করে বিড়ি খায় আর গাছতলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য নিয়ে গুরু গম্ভীর আলোচনা করে। ও’দিকে তমশ্রী প্রতিদিনের মত সমুদ্রদার ডেস্কে বসে খেজুরে আলাপ করছে। সমুদ্রদা এই অ্যাকাউন্‌টে ক্লায়েন্ট পার্টনার। তমশ্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওকে মাছের ঝোল খাইয়ে খাইয়েই বিয়ের প্রস্তাবে রাজি করিয়েছে। ছুটিতে দেশে গেলেই গাঁটছড়া বাঁধবে। ছুটিটাই পাচ্ছে না বেচারিরা। মেয়েটা আজকে বোধহয় মৌরলা মাছের চচ্চড়ি এনেছে। গোটা অফিসে আঁশটে গন্ধ ম ম করছে। বিল্ডিং অ্যাডমিনিস্ত্রেশনের গ্যারি ম্যাক্লাস্কি কিছুক্ষণ আগেই মিস্তিরি নিয়ে এ’দিক সে’দিক ঘুরে দেখছিল। ওরা ভেবেছে গ্যাস লিক করেছে। গাধাগুলোকে চচ্চড়ি বোঝাতে গেলে আরেকটা সিভিল ওয়ার হয়ে যাবে।

নর্থ ক্যারোলিনার বিখ্যাত ব্যাঙ্কের আইটি সার্ভিসিং আউটসোর্স হয়েছে কলকাতার এক কুখ্যাত লেবার সরবরাহকারী কোম্পানির কাছে। সেই সূত্রেই এক ঝাঁক প্রতিভাধর বাঙ্গালীর জন্ম সার্থকতার সুযোগ লাভ এবং আমার সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ। যেখানে তিনটে বঙ্গ সন্তান একত্রিত হলেই পলিটিক্যাল পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে আমরা সংখ্যায় দশের কাছাকাছি। প্রতি সপ্তাহে মাছের রেসিপির প্রতিযোগিতা হচ্ছে এ’বাড়ি ও’বাড়িতে। দুর্গাপূজা কমিটির প্রসব বেদনাও শুরু হয়ে গেছে। অথচ, আমার অবস্থা তথৈবচ। গিন্নিকে বুঝিয়ে পারি না যে আমি চিরকালীন পোড়া কপালী। বাকি সবাই রীতিমত গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমার ঘাড়ে চার চারটে প্রোজেক্টের জোয়াল। সপ্তাহান্তে ছুটি নিতে হলেও অনেক ওপরতলা থেকে অনুমতি নিতে হয়। বেশিরভাগ দিন অবশ্যি পারমিশন পাওয়া যায় না। একদিকে বাঁচোয়া। ঘুরতে যাওয়ার ঝামেলা নেই। কিন্তু আমার বউও নতুন। সে মানবে কেন? তার বদ্ধমূল ধারণা, আমার পাশের ডেস্কের বুড়ি শ্যানর আসলে পামেলা আন্ডারসন। তার অমোঘ আকর্ষণেই নাকি আমি রোজ অফিস যাই। ঘর থেকে বেরনোর সময় কপালে সাধক মহাপুরুষদের ছবি ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র পড়ে। কাল্পনিক সুন্দরীর গাড়ির চাকায় একটা দুটো পেরেক ফুটলে শান্তি পাবে মনে হয়। খেয়াল হল আজকে তাড়াহুড়োয় সেই পেন্নামটা বাদ পড়ে গেছে। গৃহিণীর বদ অভ্যাস নিয়ে ঠাট্টা করলে কি হয় আজকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

আমার শুকনো মুখ দেখে তমশ্রী ইশারায় জানতে চাইলো কিছু গোলমাল হয়েছে নাকি। আমি অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমার বিপদ শুনে তোর কি হবে? থাক তুই হবু বরকে নিয়ে। আমার কৃতকর্মের কথা ছড়িয়ে পড়লেই এমনিতেই সব বন্ধুত্ব মায়া হয়ে যাবে। উপল ধুমপানের শেষে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় পিঠে এক চাপড় মেরে বলল, “কিরে? এমন ছটফট করছিস কেন? পটি পেয়েছে তো ওয়াশরুমে যা।”

বাংলা ভাষায় হাসি মজাক এখানে এক্কেবারে নিষিদ্ধ। মনিবেরা আমাদের খুশি থাকার কারণ বুঝতে না পারলে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কোম্পানির মাথারা নালিশ পেয়ে সোজা চলে আসে অকুস্থলে। ছোট কনফারেন্স রুমে বন্দি করে এক ঘণ্টা ধরে বক্তৃতা ঝাড়ে, কি করে আরও প্রফেশনাল, আরও উন্নত দাস হওয়া যায়। বিদেশীদের কর্ণকুহরে তামিল, তেলুগু সুধা বর্ষণ করলেও বাংলা নৈব নৈব চ। এতগুলো বাঙ্গালী এক বিল্ডিংয়ে আছি বলে এমনিতেই দক্ষিণই দাদাদের শিরঃপীড়ার শেষ নেই। তাই সুযোগ পেলেই ক্লাস নিতে ভোলে না। মিটিঙয়ে সমুদ্রদা ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানাতে থাকে এক কোণায় দাঁড়িয়ে। চচ্চড়িতেই ওর মেরুদণ্ডটা গেছে। তবে একমাত্র উপলটাই চালিয়াতি চালিয়ে যাচ্ছে। ওর মধ্যে বেশ বিদ্রোহী কবি ভাব আছে। অবাঙ্গালীদের সামনে বাংলা বলে আর আমাদের সাথে ইংরাজি বা হিন্দি। যাইহোক, ওকেও উপেক্ষা করলাম। আমার লাঙল আমাকেই বইতে হবে।

“কি ব্যাপার র‍্যাট? এখানে কি মনে করে?”

নাঃ, ব্রুক্‌স আমায় ইঁদুর বলে গালাগালি দেয়নি। যুক্তাক্ষর এদের দাঁতে ধরে না। তাই, পিতৃদত্ত রতিকান্ত নাম এরা ছোট করার দু’রকম অপশন দিয়েছিল। হয় নামের প্রথম ভাগ ওড়াবে নয়তো দ্বিতীয় ভাগ। প্রথম ভাগ সরে গেলে বাকিটা যাচ্ছেতাই রকমের বাজে শোনায় দেখে আমি নিজেই “র‍্যাট” হতে রাজি হয়েছি। যাকগে, এই ঘটোৎকচের সামনে আমরা সকলেই ইঁদুর। এমনকি আমাদের পেটমোটা ভার্টিক্যাল হেড পদ্মনাভনও যার আদরের নাম “পাদু”।

“একটা বিরাট গোলমাল হয়েছে ব্রুক্‌স…”

গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের অন্তরাত্মা শুদ্ধ করার প্রয়াস করলাম। দারুণ গুরুত্বপূর্ণ কথা পেটের ভিতরে চেপে রাখলে গ্যাস হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই চোঁয়া ঢেঁকুর উঠবো উঠবো করছে। কলকাতা হলে তুলেই ফেলতাম। নেহাত দেশের নাম ডোবাতে চাই না বলে লজ্জাশরম করছি।

“না না র‍্যাট। কোনো অজুহাত চলবে না। প্রতি সপ্তাহে তুমি একই ঘ্যানঘ্যানানি করো। পাদুকে বলাই আছে, তোমার রোলে উইকএন্ড বলে কিছু নেই। শনি, রবি কোথাও ঘুরতে গেলে যাও। কিন্তু মাথায় রেখো পাঁচ মিনিটের নোটিসে অনলাইন হতে হবে। যদি না হও, সোজা তোমার বসের কাছে ফোন যাবে।“

মশা তাড়ানোর ভঙ্গিমায় ব্রুক্‌স কথাগুলো বলল। মনে মনে নিজেকে যথেচ্ছ শাপশাপান্ত করলাম। এর চেয়ে দেশে ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসে কাজ করলে অনেক বেশি রোয়াব থাকতো। দিনে আট ঘণ্টার এক মিনিট ওপারে গেলেই বোতাম টিপে লোডশেডিং করে দিতাম। কর্পোরেট আইটির জোয়ারে ভেসে যবনের হাতে পড়েছি। খানা খাওয়ার মূল্য চোকাতেই হবে। লোকটাকে ঠাসিয়ে চড় মারার কল্পনাও করতে পারছি না শান্তিতে। এতো উঁচুতে গাল।

“সে’রকম কিছু নয়। আসলে বলছিলাম…”

আমার করুণ স্বর আবার ব্যাঘাত ঘটাল ব্রুক্‌সের রোম্যান্সে। অতিষ্ঠ হয়ে ঠকাস্‌ করে ফোন রেখে আমার দিকে ঘুরে বসলো। চাহুনিতে অসম্ভব বিরক্তি। বলল, “র‍্যাট তোমায় গতকাল যে কাজ দিয়েছিলাম হয়েছে? আজ সকালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। এখানে সময় নষ্ট করছ কেন?”

হতচ্ছাড়া গতকাল রাত দশটায় আমায় আচমকা ফোন করে নতুন প্রোজেক্টের দায়িত্ব দিয়েছে। মিশেল, যার হাতে কাজটা ছিল, সে নাকি বিনা নোটিশে ম্যাটারনিটি লিভে চলে গেছে। ম্যাটারনিটি লিভ বিনা নোটিশে কি করে হয় তা মা ষষ্ঠীই জানেন। রাত বিরেতেই ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গেছিলো ব্যাঙ্কে। ব্রুক্‌সের শুভানুধ্যায়ী পাদু আর সমুদ্রদা আগবারিয়ে বলেছিল, “চিন্তা কি? র‍্যাট আছে তো। ওকে বললেই সামনে নেবে।“ ওমনি কাহিনীর আগাপাশতলা না জেনেই আমি হয়ে গেলাম এক্সপার্ট। রাতভোর জেগে চালাতে হল জব। তাতেও পরিত্রান নেই। আজ পাঁচ মিনিট দেরিতে অফিসে ঢোকার জন্যে ইতিমধ্যেই পাদু বাঙ্গালীদের সময়জ্ঞানের অভাবের ওপরে প্রবন্ধ লিখে সোয়া ঘণ্টা খেয়ে গেছে। সম্রাট শশাঙ্ককের জমানা হলে এক্ষুনি দক্ষিণ ভারত দখলের অভিযান চালানোর পরামর্শ দিতাম। হায়রে গৌড় বঙ্গ!

“ওই ব্যাপারেই কথা ছিল,” আমি আমতা-আমতা করে বললাম। “একটা ছোট ভুল হয়ে গেছে।“

ব্রুক্‌স পায়ের ওপরে পা তুলে বসল। ডান হাতে মোবাইল। এক্ষুনি পাদুর কাছে আমার নামে নালিশ যাবে। কি ভুল করেছি জানলেই ফটাফট টাইপ করে ফেলবে। করিৎকর্মা লোক। কোনো কাজে দেরী করে না।

শ্রোতার মধ্যে যৎসামান্য হলেও আগ্রহ জাগাতে পেরেছি দেখে আমি পরবর্তী সংবাদ দিলাম, “ভুল করে ডেটাবেসের টেবিল ড্রপ করে ফেলেছি। কাস্টোমার ইন্‌ফর্‌মেশন টেবিল।“

“কোথায়?”

“আজ্ঞে, প্রোডাক্‌শনে।“

“হা হা হা, ইউ আর ফানি র‍্যাট। ইয়ার্কি করার আর সময় পেলে না।“

“সত্যি বলছি ব্রুক্‌স। বিশ্বাস কর। এতো কাজের চাপে ভুল হয়ে গেছে।“

আমাদের বাদামী মুখে সত্যি বৈচিত্রের বড়ই অভাব। খুব রেগে গেলে বা লজ্জা পেলে বড়জোর কান লাল হয়। সেখানে ফিরিঙ্গীদের চেহারায় ঋতু পরিবর্তন খুবই অসামান্য ভাবে প্রকাশ পায়। বিপদের ঘনত্ব টের পেতেই ব্রুক্‌সের মুখে অরোরা বেরিয়ালিসের বর্ণচ্ছটা খেলে গেলো। শেষ পর্যন্ত রাঙা মুলোর রঙ ধারণ করে ব্রুক্‌স “পাদু পাদু” ডাক ছেড়ে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে কিউব পরিত্যাগ করলো।

যেরকম ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেছিলাম তার চেয়েও কয়েক স্কেল ওপর থেকে কাঁপুনি শুরু হল ফ্লোর জুড়ে। দাঁড়িয়ে থেকে দেশি বিদেশী বড়কর্তাদের রক্ত চক্ষু নিয়ে প্রবল ছোটাছুটি পর্যবেক্ষণে আমি খুব একটা সুরক্ষিত বোধ করলাম না। আমার দিকে ওদের রুক্ষ দৃষ্টিপাতে মনে হচ্ছিলো নর্থ কোরিয়ার জায়গীর আমিই পেয়েছি। মাথা নিচু করে সিটে চলে এলাম। সেখানে অনেকেই উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে গেলো, কে সেই ইঁদুর যে ব্যাঙ্কের কাস্টোমার ডেটাবেস টেবিল উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্ডারগার্টেনে যেমন হেড ডাউন করে থাকতাম তেমনই ঘাড় গুঁজে বসলাম। উপল আর তমশ্রী সান্ত্বনা দিতে এসে বলল, “দেখিস একদিন এই বাজে সময়টা কেটে যাবে। তখন ভাবলে বরং মজা পাবি।“

কিন্তু চাইলেই কি আর শক্ত থাকা যায়। বিশেষত যখন কানে এলো পাদু এবং সমুদ্রদার গুরুতর আলোচনা, কিভাবে আমায় পত্রপাঠ ছাঁটাই করে ক্লায়েন্টকে খুশি রাখা যায়। ওরা কেউ একবার মুখ ফুটেও বলল না, আহারে, ছেলেটা কয়েক মাস টানা রাত দিন কাজ করছে। মানুষের ব্রেকিং পয়েন্ট তো থাকেই। অথবা ভুল সবারই হয়। ইঞ্জিয়ারিং কলেজ হস্টেলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ র‍্যাগিংয়ের রগড়ানি খেয়েছি নির্বিকার চিত্তে। কর্পোরেট র‍্যাগিংয়ে মাত্র চল্লিশ মিনিটে আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছে গেলো। দিনের শেষে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম, আগামীকালই হয়তো আমায় বরখাস্ত করা হবে। ভারতের প্রিমিয়ার কোম্পানি একজনকে দিয়ে নির্দ্বিধায় চারজনের কাজ করাতে পারে, কিন্তু ভুল ক্ষমা করে না। নইলে ভিনদেশী ক্লায়েন্ট ভাববে কি?

পরের দিন মহাপুরুষদের ছবি একশবার মাথায় ঠেকিয়ে অফিসে গেলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য, সব চুপচাপ। গতকালের ঘটনা নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্যই করছে না। যে যার কাজ করে চলেছে যেন কিছুই হয়নি। ব্রুক্‌সের মুখ আজকে টমেটোর কাছাকাছি রঙ নিয়েছে তাই ওকে আর ঘাঁটালাম না। কার কাছে ওয়েদার রিপোর্ট জানতে চাইব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখনই তমশ্রী এলো আমার ডেস্কে। ওকে বললাম, “হ্যাঁরে, এরা আমায় কখন তাড়াবে কিছু জানলি? সমুদ্রদা কিছু বলেছে?”

“তোকে কখন তাড়াবে জানি না। তবে ব্রুক্‌সের আজই শেষ দিন এখানে,” তমশ্রী বলল।

“সেকি? লোকটা বড্ড অভিমানী দেখছি। আমি টেবিল ড্রপ করেছি বলে এতো দুঃখ পেয়েছে?” আমি পুরো হতভম্ব।

“তুই কার আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কাজ করছিলি কাল?”

“হুম সেতো জানি না। আমায় আগের দিন যখন কাজ দিলো, আমি বললাম আমার অ্যাক্সেস নেই সিস্টেমে। ব্রুক্‌স বলল নতুন অ্যাক্সেস বানাতে সময় লাগবে। আজ রাতেই সব কাজ চাই। তাই একটা ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলো,“ আমি মনে করে বললাম।

“নিজের সিক্যুরিটি ক্রিডেনশিয়াল অন্যের সাথে শেয়ার করা ডেটাবেসে টেবিল সরিয়ে দেওয়ার থেকেও গর্হিত অপরাধ। ডেটাবেসের তো ব্যাকআপ থাকে। সেখান থেকে হারানো তথ্য ফিরিয়ে আনতে দুএকদিন সময় লাগবে। কিন্তু ব্রুক্‌স ব্যাঙ্কের পলিসি ভেঙ্গেছে। তাই ইমিডিয়েট টার্মিনেশন।“

সাহেব যতই অত্যাচারী হোক, আমার দোষে ও সাজা পাবে সেটা ঠিক মানতে পারলাম না। আমি পাদুর  কাছে সোজাসুজি জানতে চাইলাম, “কালকের ভুলের শাস্তি যা চাও দিতে পারো। যদি ছাঁটাই করবে ভাবো তাহলে দয়া করে বলে দিও। প্রস্তুতি নিতে হবে সেই ভাবে।”

পাদু গুরুগম্ভীর হয়ে বলল, “ব্রুকস বেরিয়ে যাচ্ছে শুনেছ নিশ্চয়ই। মিশেল ম্যাটারনিটি লিভ থেকে না ফেরা পর্যন্ত তুমি ছাড়া কেউ নেই যে প্রজেক্টটা সামলাতে পারবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। নিজের কাজ আরম্ভ করে দাও। আমারই ভুল। কলকাতার বদলে চেন্নাই থেকে কাউকে আনলে এমন জ্বালাতন হত না।”

এরপরে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওরা আমার ওপরে চাপিয়ে দিলো আরও অনেক, অনেক কাজ। দম ফেলার সময় পর্যন্ত নেই। মুনাফার লোভে শোষণকে অভ্যসে পরিণত করলো সবাই মিলে। কোম্পানির উঁচু নিচু সকলকে বার্ন আউট হয়ে যাওয়ার এসওএস পাঠিয়েও বিচার পাওয়া গেলো না। অতএব হাসিমুখে মেনে নেওয়া শুরু করলাম। সব কাজ করলাম আমি একাই। নিলাম না কারো সাহায্য। তৈরি হল না আমার কোনো পরিবর্ত। এইভাবে মাস খানেক চলার পরে পাদু গরমের ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন ওকে দিলাম আমার রেজিগ্‌নেশন নোটিশ। ওর মুখের অবস্থা হয়েছিল দেখার মত। পাঁচটা প্রজেক্ট একসাথে বন্ধ হওয়ার যন্ত্রণা কি কম নাকি? আমি হাসি চেপে রাখতে পারিনি। দেশের মহামূল্যবান আইটি সার্ভিসের অত্যাধুনিক দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে আমার প্রথম প্রতিবাদ সর্বান্তকরণে সফল। তারপরে কখনও আর কোনো ব্রুক্‌স বা পাদুকে মাথায় চড়ার সুযোগ দেইনি। হু হু বাবা, বাঙ্গালী ইঞ্জিয়াররা জীবনে ভুল একবারই করে। নেড়া আর বেলতলা মনে আছে?

🌾🌾🌾🍄 শি ল্প জ গ ৎ 🍄🌾🌾🌾


লেখা পাঠানোর ই-মেল – shilpajagatbangla@gmail.com
আমাদের ফেসবুক পেজ

কেমন লাগল আপনার, মূল্যায়ন করুন? মুল্যায়ন করতে উপযুক্ত স্থানের তারাতে ক্লিক করুন।

*১ম তারা - মোটেই ভাল নয় **২য় তারা - কিছুটা ভাল *** ৩য় তারা - মোটামুটি ভাল **** ৪র্থ তারা - ভাল ***** ৫ম তারা - খুব ভাল

গড় মতামত / 5. মতামতের সংখ্যা :

এখনো পর্যন্ত কেউ মতামত দেয়নি, আপনি প্রথম মতামত দিন।

লেখাটি নিশ্চয় আপনার ভালো লেগেছে।

পরবর্তী লেখাগুলি পেতে, আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক করুন।আর See First করে রাখুন, ধন্যবাদ।

দুঃখিত , এই লেখাটি আপনার ভালো লাগেনি।

আমি লেখাটিকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করব

কিভাবে লেখাটিকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, তা জানান?

Previous Post

আটপৌরে কবিতা ৫১-৫৬

Next Post

লাঙ্গলের বাঁট ধরা হাত

সিদ্ধার্থ পাল

সিদ্ধার্থ পাল

শুকতারা, কিশোর-ভারতী, আনন্দমেলার হাত ধরে সাহিত্যের সাথে আলাপ। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া কালীন প্রথমবার শুকতারাতে ছোট্ট একটা কবিতা প্রকাশ পায়। সেই প্রথমিক উল্লাস বাকি বছর গুলোতে দেওয়াল-পত্রিকা বা স্কুল আর কলেজের ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বর্তমানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটা বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত থাকলেও লেখালেখি, ছবি আঁকার সাথে যোগাযোগটা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইদানিং ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে নিয়মিত ভাবে লেখা প্রকাশ করেছেন।

Next Post
গৌরাঙ্গ মাজী - শিল্পজগৎ

লাঙ্গলের বাঁট ধরা হাত

হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় - শিল্পজগৎ

দুটি কবিতা

অনাদি প্রসাদ মাজী - শিল্পজগৎ

পুরুষতন্ত্র

Discussion about this post

জাতীয় সঙ্গীত

https://shilpajagat.com/wp-content/uploads/2020/06/jana-gana-mana.mp3

শিল্পজগৎ এ কীভাবে আপনার লেখা পাঠাবেন?

খুবই সহজ,

আপনার মৌলিক রচনাটি কোন বিভাগের জন্য তা জানিয়ে, লেখাটি পাঠাবেন, লেখাটির সাথে-

  1. এক কপি ফোটো
  2. ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার
  3. লেখক/কবি পরিচিতি

দিয়ে পাঠিয়ে দেন আমাদের মেইল আইডিতে

shilpajagatbangla@gmail.com

আমাদের ওয়েবসাইটের আপডেট গুলি পেতে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক করুন।

https://www.facebook.com/banglashilpajagat

TechnojagatTechnojagat

বিভাগ

আমাদের ফেসবুক বন্ধুরা

সাম্প্রতিক

নীলাঞ্জন কুমার - শিল্পজগৎ

আটপৌরে কবিতা ৭১-৭৫

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
সিদ্ধার্থ পাল - শিল্পজগৎ

যখন যেমন

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
বিপ্লব গোস্বামী - শিল্পজগৎ

মৃত‍্যুঞ্জয়ী মহানায়ক

জানুয়ারি ৩১, ২০২১
কিশলয় গুপ্ত - শিল্পজগৎ

আমার মল্লিকা বনে ২৬

জানুয়ারি ৩১, ২০২১
অনাদি প্রসাদ মাজী - শিল্পজগৎ

চাই জবাব

জানুয়ারি ৩১, ২০২১
নীলাঞ্জন কুমার - শিল্পজগৎ

আটপৌরে কবিতা ৬৬-৭০

জানুয়ারি ৩১, ২০২১
দেবাশিস সরখেল - শিল্পজগৎ

বিদ্যাসাগর

জানুয়ারি ২৪, ২০২১
বিপ্লব গোস্বামী - শিল্পজগৎ

তিনিই সব

জানুয়ারি ২৪, ২০২১
কিশলয় গুপ্ত - শিল্পজগৎ

আমার মল্লিকা বনে ২৫

জানুয়ারি ২৪, ২০২১
নীলাঞ্জন কুমার - শিল্পজগৎ

আটপৌরে কবিতা ৬১-৬৫

জানুয়ারি ২৪, ২০২১
শিল্পজগৎ

শিল্প জগৎ, এটি বাংলা সাহিত্য চর্চার একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠান । শুধু সাহিত্য নিয়েই যে এখানে চর্চা হয় তা নয়, সাহিত্য ছাড়াও চিত্রশিল্প,অঙ্কন শিল্প এই সমস্ত কিছু নিয়েই এই শিল্প জগৎ।এই শিল্প জগৎ এর হাত ধরে সমস্ত কবি সাহিত্যিক চিত্র শিল্পী সকলে আজ এক সুতোয় বাঁধা । তাদের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান । আপনি যদি কবি, গল্পকার , লেখক বা চিত্র শিল্পী অথবা সাহিত্য জগৎকে ভালোবেসে সদ্য লেখালেখি শুরু করেছেন বা চিত্র অঙ্কন করেন তাহলে আপনার সৃষ্টি পাঠিয়ে দেন আমাদের এখানে ।

  • about
  • Contact
  • Privacy & Policy
  • advertise

"all rights reserved"   & copyright © 2020 Shilpajagat  - a creation of  Technojagat . *** শিল্পজগতে প্রকাশিত যে কোনো বিষয়ে লেখনীর "দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত লেখকের ব্যাক্তিগত"। এর জন্য শিল্পজগৎ কখনও দায়ী নয়। শিল্পজগৎ, শিল্পীর শিল্প প্রদর্শনের একটি মাধ্যম মাত্র।এটি কোন বানিজ্যিক সংস্থা নয়।

No Result
View All Result
  • কবিতা
  • গল্প
    • অনু গল্প
    • ছোট গল্প
  • শিশু-কিশোর
    • অনু ছড়া
    • ছড়া
    • লিমেরিক
  • সাহিত্য সমালোচনা
  • প্রবন্ধ
  • চিন্তন
  • আর্ট গ্যালারি
  • পছন্দের লেখক
  • আপনার কলম

"all rights reserved"   & copyright © 2020 Shilpajagat  - a creation of  Technojagat . *** শিল্পজগতে প্রকাশিত যে কোনো বিষয়ে লেখনীর "দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত লেখকের ব্যাক্তিগত"। এর জন্য শিল্পজগৎ কখনও দায়ী নয়। শিল্পজগৎ, শিল্পীর শিল্প প্রদর্শনের একটি মাধ্যম মাত্র।এটি কোন বানিজ্যিক সংস্থা নয়।

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Don`t copy the Content! \\\\\\\"all rights reserved\\\\\\\" ©copyright © 2020