লস্ট & ফাউন্ড
চিন্ময় বাউরি
“lost my all contacts, please ping me with your name and number”
এই নিয়ে বিগত এক বছরে এহেন দুবার ফেসবুকে পোস্ট করেছে সঞ্চিতা! জানিনা বাপু এই backup ভরা জীবনে ঘন ঘন contacts হারায় কিভাবে? মানুষের একবার ভুল হতে পারে, তাবলে আবার হবে, বার বার হবে! নাকি সবটাই sympathy কুড়োনোর stunt!! কে জানে? সঞ্চিতার পোস্ট দেখে এত কিছু ভেবে নিল অমিত।
স্কুলের বন্ধু, কলেজের বন্ধু, পাড়ার বন্ধু ওসব এখন অতীত, এই social media এর যুগে পুরোটাই facebook আর instagram!
সঞ্চিতাকে অমিত প্রথম দেখেছিল বাসে, অফিস ফিরতি অমিতের ক্লান্ত দুটো চোখযুগল কিছুতেই নিজেদের অবস্থান সরাতে পারছিল না সঞ্চিতার মুখ থেকে, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি এক আজব মোহের বশে আটকে রেখেছে তাদের! love at first এর গল্প শুনে এসেছে এতদিন, মনে হচ্ছে এবার মদন দেবের পাল্লাই সেও পড়লো এসে!
তারপর থেকেই অমিত ঐ বাসের নিত্যযাত্রী, তবে এই বাস যাত্রাই তার সুফলের থেকে কুফল বেশি, একে বাসটা তার অফিস দেরিতে পৌছায়, দুইএ বাসটা তাকে একটু দুরে নামিয়ে দেয় তাছাড়া এ বাসের ভাড়াটাও বেশি যাইহোক দেরিটা কোনো factor নয় সরকারি অফিস কোনসা জলদি শুরু হয়, আর পাঁয়ে নাহয় একটু হাঁটলেই বা, বাড়ি ফিরে তো আর শরীরচর্চা হয় না, দিন দিন কেমন যেন মুটিয়ে যাচ্ছে আর সবশেষে ভাড়াটা একটু consider করাই যায়! তবে এত কিছু যার জন্য সেই মহিয়সী নারী “সঞ্চিতাদেবী” এর নামটা পর্যন্ত জানতে পারেনি অমিত! প্রায় প্রতিদিন বাসের পেছনের সীটটা সঞ্চিতার জন্য বরাদ্দ থাকে, কানে হেডফোন লাগিয়ে আপনমনে জানালার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে, matching dress আর lip sync এর ফলে গোলাপি দুটো ঠোঁটের গতিপ্রকৃতি অমিতের বুকে আগুন ঝরায়!
চোখাচোখি, হালকা ঝাড়ি মারা যে শুরু করেনি অমিত তা নয়, কিন্তু তাতেও উল্লেখযোগ্য সাড়া পাই নি। অনেক চেষ্টা করেছে অমিত, কিন্তু ঘুরেও তাকাই নি সঞ্চিতা! একবার তো সঞ্চিতার পাশে বসার সুযোগও হয়েছিল অমিতের, কথোপকথন শুরু করার চেষ্টা করেছিল অমিত কিন্তু কিছু না শুনার ভান করে জানালার দিকেই তাকিয়ে রইল সঞ্চিতা, বড্ড বেকায়দায় পড়েছিল অমিত সেবার! এমনকি বাসের লোকজন পর্যন্ত জেনে ফেলেছে ওর ব্যাপার টা অথচ অমিত এখনও উপেক্ষার অববাহিকাটাই ডিঙিয়ে উঠতে পারল না!
কথায় আছে “দেনেওয়ালা যব ভি দেতা দেতা ছপ্পড় ফাড়কে”! অবশ্য ছপ্পড় ফাঁড় না কি সেটা সময় বলবে, এখানে মার্ক জাকারবার্গ স্বয়ং প্রকট হলেন ব্রহ্মা হয়ে, ফেসবুকের people you may know তে খুঁজে পেল বাসের সেই উপেক্ষার দেবীকে, নাম সঞ্চিতা ব্যানার্জি, ভালো করে প্রোফাইলটা ঘেঁটে দুগ্গা দুগ্গা করে request টা পাঠিয়ে দিল! এখানে একটা ব্যাপার আছে আপনি একটা মেয়ের প্রোফাইল দেখলেন, পছন্দ হলো, request পাঠালেন এবার আপনি সেটা ভুলে যান। মেয়েরা বিশেষ করে নিজেদের সুন্দরী ভাবা মেয়েরা এই request চট করে accept করে না, এখানে তারা state bank of india এর কর্মচারীদেরও পিছনে ফেলে দেয়! আগে মেয়েরা ফেসবুকের friend request এর ভিড় সামলাবে, ভালো করে আপনার প্রোফাইল দেখবে, আপনার কিছু recent share দেখবে এসবের পর যদি আপনার dp এর থোবড়া টা তার পছন্দ হয় তবেই আপনি সেই সুবিধার লাভ উঠাতে পারবেন মানে request accepted হবে! মাসের পর মাস লেগে যায় আর friend request পড়ে পড়ে ধূলো খেতে থাকে, সঞ্চিতা এক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে সময় কম নিল, মাত্র ১৫ দিনের মাথায় request টা accept করল! আর ঐ notification পেয়ে তো অমিত একেবারে আনন্দে আত্মহারা, পারলে এই সামনের বৈশাখে বিয়েটা সেরে ফেলে আর ঠান্ডা ঠান্ডা মানালিতে হানিমুন!
কোলে দুটো বাচ্চা নিয়ে “হাম দো হামারে দো” এর ক্যাপশন দিয়ে একটা ফেসবুক cover picture এর কথা ভাবতে ভাবতে message করেই ফেলল, আর ভবিষ্যতের বাস্তবতাকে এক ঝটকায় কল্পনায় রুপান্তরিত হয়ে গেল প্রথম message seen করে reply না পাওয়ায়! স্বপ্নটা আবার ভেঙে চুরমার করে দিল সেই উপেক্ষা নামক nemesis! মানে request accept করাটা ছিল হিমশৈলের চূড়া মাত্র, অমিতের ভালোবাসার টাইটানিক টা সঞ্চিতার উপেক্ষার হিমশৈলের নীচের অংশে ধাক্কা খেয়ে গহন অতলান্তিক মহাসাগরে এভাবে তলিয়ে যাবে, এটা আশা করেনি অমিত!
ফেসবুক memory তে জানান দিল যে দীর্ঘ এক বছর আগে বন্ধু পাতানো হয়েছিল উপেক্ষার সাম্রাজ্ঞী সঞ্চিতা ব্যানার্জির সাথে, অথচ এত দিনে অমিতের কোনো পোস্টে কমেন্ট দেওয়া তো দুরের কথা লাইক পর্যন্ত করেনি সঞ্চিতা, আর এদিকে সঞ্চিতার প্রতিটা পোস্টে অমিতের লাভ রিয়াক্ট আর কমেন্ট ছিলো বরাদ্দ! অমিত ভাবতো message seen করে ছেড়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে, কমেন্ট করে সে নিজের উপস্থিতি জানান দেবে! কিন্তু না সঞ্চিতা বেছে বেছে তার কমেন্টটা বাদ দিয়ে বাকিদের reply করতো! মানে এতদিন উপেক্ষা স্কেলার রাশি ছিল এবার তা ভেক্টর রাশিতে পরিনত হয়েছে!
তাই আর ভালো লাগেনা অমিতের, আর পারছে না উপেক্ষার আগুনে জ্বলতে, একটু নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়েছে, আর বাসের পেছনের সীটে চোখ যায় না, সঞ্চিতার ফেসবুক পোস্টে রিয়াক্ট না দিয়ে scroll করতে শিখে গেছে, তবে মাঝে মাঝেই নিঝুম রাতে এক নিশ্বাস নিকোটিন টেনে ফোনের wallpaper এ সঞ্চিতার ছবি দেখে আর ভাবে যে কেন এত উপেক্ষার শিকার সে? দেখতে সে খুব একটা খারাপ না, সরকারি কর্মচারী তাছাড়া বেশ লম্বা, মেয়েরা তো এরমই boyfriend চায়! এক বছর এভাবে দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিলেও আর নিজের আরেকটা বছর এই মেয়ের পেছনে তেল মারতে পারবে না, unfriend করতে গিয়েই চোখে পড়ল আজকের status update! যাক একটা শেষ চেষ্টা করে দেখবে অমিত আসলে প্রেমিকেরা আর কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না! তবে এটাই শেষ, আর না! তাহলে মহারানি নিজের নাম্বার হারিয়ে ফেলেছেন, হুম পোস্টে তো ছেলেপুলেদের কমেন্টের ভিড় এখানে সে কোথায় হারিয়ে যাবে, কুল কিনারা খুঁজে পাবে না, আর শেষ চান্স বলে কথা কাজেই it needs to be very very good! অগত্যা আবার সেই message এর গিলোটিনে!
– হাই! আমি অমিত সেন! আমার নাম্বার ৭৯০৮######! সেভ করে নাও!
– excuse me! phone টার memory loss হয়েছে! আমার না! তোমার নাম্বার আমার কাছে কোনদিনই ছিল না।
(যাক ফাটকাটা খেলে গেল তাহলে! অবশেষে উপেক্ষার বরফ গলিয়ে reply দিতে বাধ্য হল সঞ্চিতা! এই একটা reply পাওয়ার জন্য কি করেনি অমিত, যদিও কতক্ষন দেয় সেটাই দেখার)
– ছিল না মানে এই নয় যে কোনদিন থাকবে না! ভাবলাম নাম্বারটা নিয়ে রাখো, আমরা তো নিত্যসহযাত্রী ফোন করে দেবে আর আমি তোমার সীটটা বুক করে দেব!
– আচ্ছা! সীট বুকিং এজেন্সি খুলেছো বুঝি! আর by the way আমি তোমার থেকে আগে বাসে উঠি so. . .
– তাহলে তোমার নাম্বারটা দাও!
– কেন? কোন দুঃখে?
– তোমাকেই ফোন করে বাসের হাল হকিকত জেনে নেব! ফাঁকা আছে নাকি ভিড়!
– well tried! but sorry, এত সহজে আমার নাম্বার পাওয়া যায় না, you have to earn it!
– bournville চাইছি না! তোমার নাম্বারটা চাইছি, বিগত এক বছর ধরে তোমাকে follow করছি, এখনও কি অচেনা রইলাম!
– sorry, i have a boyfriend!
– সেটা কি আমি জানতে চাইলাম?
– না বলে রাখলাম, আজকে নাম্বার চাইছো, কাল বাদে পরশু প্রোপোজ করে ফেলবে, তারপর সেই ন্যাকা ন্যাকা কথাবার্তা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, তুমি আমার সব ইত্যাদি ইত্যাদি . . . . .
– ন্যাকা! বলো কি? এগুলোই তো প্রেমের বেদবাক্য! বড্ড unromantic তুমি, এগুলো ছাড়া কি প্রেম শুরু হয়?
– এগুলো দিয়ে প্রেম না বরং ন্যাকা ন্যাকা প্রেম শুরু হয়!
– আদও প্রেম করো নাকি timepass!
– সেটা আমার boyfriend কে জিজ্ঞেস করো! আমি কি করি, প্যায়ার না বকওয়াস?
– এক মিনিট এসব কথা তুমি বলছো তো নাকি তোমার boyfriend তোমার হয়ে proxy দিচ্ছে!
– এতটাও insecurity তে ভোগে না, বা বলতে পারো ভুগতে দিই না!
– কে জানে বাবা? এখনকার দিনে তো শুনেছি boyfriend girlfriend এর কাছে একে অপরের ফেসবুক id থাকলেই নাকি ভালোবাসা বাড়ে! এটা এক প্রকারের বীরত্বের কাজ!
– for your kind information! আমাদের ফেসবুক আমাদের নিজেদের কাছেই সংরক্ষিত!
– তাহলে আমি কেন প্রায় ১ বছর ধরে উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হলাম! i think i deserve some respect!
– কেন মশাই আপনি কি দেশের রাষ্ট্রপতি! যে আপনাকে সম্মান জানাতে হবে, ভালো লাগেনি তাই কথা বলিনি! ব্যাস মিটে গেল!
– বাহ! কত সহজে বলে দিলে ভালো লাগেনি, জানো প্রথম দিন যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম, বিশ্বাস করো রাতে ঘুম হয় নি, তোমার মুখটাই বার বার আমার স্বপ্নে আসছিল!
– হা হা হা! স্বপ্নে এসে কি বলছিল?
– হাসছো তুমি? বলছিল হাল ছেড়ো না বন্ধু, আমি একদিন তোমার হবই! কেউ আটকাতে পারবে না!
– বাবাহ! আমার এত confidence কবে এল, যে সেটা আবার তোমায় বিলি করতে লাগলাম!
– সেটা তুমি জানো, আচ্ছা! তুমি কি love at first sight এ বিশ্বাস করো?
– সেটা আবার কি জিনিস! একটা দর্শনে কি প্রেমের বর্ষন সম্ভব, জানিনা কে বা কারা এটা বানিয়েছে! ওসব সিনেমাতে হয়, বাস্তবে না!
– আমার সাথে হয়েছে তাই আমি জানি!
– ওটাকে ভালোবাসা বলে না ভালোলাগা বলে! love needs time and lust needs bed!
– ভুল করছো, আমি প্রেমের ফাঁদে পড়েছি, কামের ফাঁদে নয়!
– sorry but এটা ছেলেদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ, অনেক ছেলেদের দেখলাম, যারা ভালোবাসা মানে শুধু শরীর বোঝে আর শরীর খোঁজে!
– জানিনা তুমি কোন ছেলেদের সাথে মিশেছো বা জেনেছো, কিন্তু সবাই এমনি হয় না, কিছু নিপাট ভদ্রলোকও হয়, যারা মেয়েদের সম্মান করতে জানে!যেমন আমি!
– হুম মানলাম সবাই এমনি হয় না, কিন্তু এদের শতকরা ভাগটাই বেশি!
– সেদিক দিয়ে বলতে গেলে কত মেয়ে টাকার জন্য ভালোবাসে, golddigger বলে মেয়েদের একটা classification আছে সেটা নিশ্চয় তুমি জানো!
– আর কথা বলা যাবে না, এবার ঝগড়া হয়ে যাবে তাহলে! bye
– চাপ নেই সে নাহয় আমি নিয়ে নিচ্ছি, বুঝলাম তোমার প্রেমে কোনো interest নাই, আর তাছাড়া পুরুষজাতির এই অপমান সহ্য হলো না!
– তাহলে motivation কি clean bowled হয়ে গেল?
– না না retired hurt নিচ্ছি, তবে যেতে যেতে একটা কবিতা শুনিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, এটা তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন রাতে লিখেছিলাম, এটা আমার জন্য তোমার এক বছরের উপেক্ষার প্রতি উৎসর্গ করলাম!
– আচ্ছা হয়ে যাক!
– “অফিস ফিরতি ক্লান্তি বেয়ে,
ঘর্মাক্ত শরীর ও মনে প্রশান্তির ছাপ!
রোজনামচার যাত্রাপথে,
গ্লানির ঢেঁকুর তুলে পর্যুদস্ত আমি,
বিহ্বল সর্পিণীর মত এলে হঠাৎ!
উচ্ছল, চঞ্চল ঠিক যেন তরল,
আটকে গেল চোখযুগল তোমার মুখ চেয়ে,
গ্রীষ্মের দাবদাহে আনলে একটা শীতল স্রোত,
আর নয়নাভিরাম”!!
– wow! দারুণ, আমাকে নিয়েও যে কেউ কবিতা লিখতে পারে, ভাবতে পারছি না! thank you so very much!
– you are strongly welcome! এমনি আরও অনেক কবিতা লিখেছি যার মূল বিষয়বস্তু কিন্তু তুমি! এবার চললাম, ভালো থেকো! byee
– listen, একটা কাজ করা যায় না?
– কি কাজ?
– ঐ যে কবিতাগুলো কি আমাকে দেওয়া যাবে?
– অবশ্যই, কবিতার বিষয়বস্তু যখন তুমি, তখন তোমায় royalty তো দিতেই হবে! কিন্তু কিভাবে দেব? নাম্বার তো দিলে না, যে ফোন বা whatsapp এ পাঠিয়ে দেব, এখানে কি ফোটো তুলে পাঠিয়ে দেব!
– না না এখানে না, বরং কালকে বাসে আমার পাশের সীটে বসে আমাকে শুনিও, মন দিয়ে শুনব!
– কি? তাহলে কি . . . . . . .
– আজ্ঞে না! we are just good friends!
(তাহলে দীর্ঘ লড়াইয়ের সমাপ্তির পর উপেক্ষার অবসান ঘটল, অবশেষে অমিতের অপেক্ষার দিন শেষ, তারপর দুজনের মধ্যে কি হলো সেটা তো সময় বলবে, কিন্তু moral of the story হলো ঐ যে অমিতের স্বপ্নের দৈববাণী “হাল ছেড়ো না বন্ধু”!!)
Discussion about this post